শুধু মানুষই নয়, জীব জগতের সমস্ত জীবের জন্যই ভিটামিন অপরিহার্য। ইংরেজি ভিটামিন বা ভাইটামিন শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ভিটা (Vita) আর জার্মান শব্দ অ্যামিন (Amin) থেকে। ভিটা অর্থ জীবন আর অ্যামিন এসেছে অ্যামিনো এসিড থেকে। ১৯৯২ সালে দুটো শব্দ এক করে ভিটামিন শব্দটির প্রচলন শুরু হয়। পোল্যান্ডের বায়োকেমিস্ট বা প্রাণ রসায়নবিদ কাজিমির ফুঙ্ক (১৮৮৪-১৯৬৭) থায়ামিন নামে এক উপাদান থেকে ভিটামিন আবিষ্কার করেন।
খাবারের মধ্যে লবণ, পানি,শ্বেতসার,স্নেহ ও প্রোটিনের মতই ভিটামিন প্রয়োজনীয়। এর অভাব হলে মানব দেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রায় সবখানি নির্ভর করে ভিটামিন এর উপর। দৈহিক বৃদ্ধি, শারীরিক ক্ষমতা ,দৃষ্টিশক্তি ,চুল,ত্বক ইত্যাদি ভিটামিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অথচ নিতান্তাই নগণ্য পরিমাণ ভিটামিন শরীরের জন্য প্রয়োজন হয়। এর পরিমাণটা হলো – এক লক্ষ ভাগের দুই ভাগের ও শতকরা একভাগ মাত্র। তবু এই পরিমাণটুকু সঠিকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনকে সুস্থ আর নিরোগ রাখার ব্যাপারে গবেষকরা আজো গবেষণা করে যাচ্ছেন।
একেক ভিটামিনের একেক রকম কাজ। যেমন, শরীরের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন A । এই ভিটামিন এর অভাব হলে বিভিন্ন ধরনের চোখের রোগ হতে পারে। এটা পাওয়া যায় দুধ ও দুগ্ধজাত সবরকম খাবার, কাঁচা শাক সবজি, ডিমপর সাদা অংশ, কডমাছ ও হাঙরের যকৃতের তেলে।
ইন্দোনেশিয়ার ক্রিস্টিন আইকম্যান (১৮৫৩-১৯৩০) নামে এক বিজ্ঞানী লক্ষ করলেন সেখানে বেরিবেরি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তিনি পরীক্ষা করে দেখলেন সেখানকার লোক জন চাল খুব মিহি করে ছেঁটে খায়। এত মিহি করে ছাঁটলে তাতে থায়ামিন বা ভিটামিন B1 নষ্ট হয়ে যায় এবং তার অভাবে বেরিবেরি হয়। শুধু বেরিবেরি রোগ নয়, সব রকম শারীরিক দুর্বলতার কারণ হলো এই ভিটামিনের অভাব।
Picture : Pixabay
ভিটামিন B2 বা রিবোফ্লাভিন থাকে দুধ,যকৃত,ছানার পানি ইত্যাদিতে। জিহ্বায় ঘা,ঠোঁট ফাটা বা ঘা হওয়া, চর্মরোগ, শারীরিক দুর্বলতা, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা,চোখ লাল হওয়া বা জ্বালাপোড়া করা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে ভিটামিন B2 এর অভাবে।
খমির জাতীয় খাদ্যদ্রব্যে বিদ্যমান ভিটামিন B6 বা নিকোটিনিক এসিড। প্রধানত রক্তের লোহিত কণিকা তৈরির জন্য প্রয়োজন এটা। পেলাগ্রাম নামে এক রকম বিপদজনক পেটের অসুখ সারাতেও দরকার হয়।
অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় ভিটামিন B12 এর ঘাটতি হলে। উপযুক্ত ক্যলরিসমৃদ্ধ খাবার খেলে এই ভিটামিনের অভাব ঘটতে পারে না। দুধ, ছানা,মাছ,মাংস,ডিমে প্রচুর পরিমাণে থাকে ভিটামিন B12।
ভিটামিন C হলো এসকরবিক এসিড। টক জাতীয় ফল ছাড়া ও পালং শাকে এই ভিটামিন রয়েছে।
ভিটামিন D এর ঘাটতি হলে রিকেটস রোগ হয়। শিশুকালে পু্ষ্টিকর খাদ্যের অভাবে হাড় অপুষ্ট বা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। দুধ,মাংস ছাড়াও সূর্যকিরণে ভিটামিন D রয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের তেলে ভিটামিন E থাকে। এর অভাবে সর্বাঙ্গীণ শারীরিক পুষ্টি ব্যহত হয়, ফলে মানুষ অকর্মণ্য হয়ে পড়ে।
শাক সবজিতে ভিটামিন K থাকে। খাবার থেকে এর ঘাটতি পূরণ না হলে অন্ত্র নিজেই এটা তৈরি করে নেয়। এর অভাবে ক্ষতস্থানের রক্ত বন্ধ হতে চায় না।
খাবার দামী হলেই ভিটামিন সমৃদ্ধ হয় কথাটি আসলে ভুল। অনেক কম দামী খাবারে ও প্রয়োজনীয় ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সেটা জানা থাকলে এবং সে অনুযায়ী খাবার খেলে শরীরে ভিটামিনের অভাব হবে না।
nice
ধন্যবাদ,আমাদের লেখাগুলো পড়ার জন্য,আশা করি আমাদের অন্য লেখা গুলো ও পড়বেন